১৬ নয়, ফরিদপুর বিজয় দেখেছিল ১৭ ডিসেম্বর: একাত্তরের সেই গৌরবগাথা
- আপডেট সময় : ০৬:০৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 155
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটলেও, ফরিদপুরবাসী বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ পেয়েছিল একদিন পর—অর্থাৎ ১৭ ডিসেম্বর। আজকের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম আর অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে শত্রুমুক্ত হয়েছিল ফরিদপুর জেলা।
ঐতিহাসিক সেই মুহূর্ত:
১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে ফরিদপুর সার্কিট হাউসে বিজয়ী স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়। মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ ও ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট জামাল চৌধুরীর উপস্থিতিতে পতাকা উত্তোলন করেন ছাত্রনেতা ও তৎকালীন ভিপি শাহ মো. আবু জাফর। উল্লেখ্য, এই শাহ মো. আবু জাফরই ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ অম্বিকা ময়দানে প্রথম পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছিলেন।
রক্তঝরা নয় মাস:
২১ এপ্রিল শহরের শ্রী অঙ্গনে কীর্তনরত ৮ সাধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে ফরিদপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়। এরপর ২ মে ঈশান গোপালপুর জমিদার বাড়িতে ২৮ জন এবং বাকচর গ্রামে ১১ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়। এছাড়া বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও নগরকান্দায় বিভিন্ন সময়ে নারীসহ অসংখ্য মানুষকে নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ চালায় হানাদাররা।
শেষ মুহূর্তের প্রতিরোধ:
১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় আত্মসমর্পণ চললেও ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা তখনও অস্ত্র ছাড়েনি। তারা বিহারি ও রাজাকারদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়ে পাকিস্তানিরা। এদিন বিকেল ৪টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর জাহানজের আরবারসহ পাকিস্তানি বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে।
রণাঙ্গনের স্মৃতি:
যুদ্ধকালীন ফিল্ড কমান্ডার (বি.এল.এফ) শাহ মো. আবু জাফর সেই স্মৃতি রোমন্থন করে বলেন, “ভাটিয়াপাড়া ক্যাম্পে আমরা যখন আক্রমণ করি, তখন ঢাকা ও যশোর থেকে বিমান এসে আমাদের ওপর সেলিং করেছিল। বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে ভাটিয়াপাড়া শত্রুমুক্ত হওয়ার পর ১৭ ডিসেম্বর আমরা ফরিদপুর শহরে প্রবেশ করি। সার্কিট হাউসে পতাকা উত্তোলনের সেই মুহূর্তটি ছিল পরম আবেগের।”
ফরিদপুরবাসীর কাছে ১৭ ডিসেম্বর কেবল একটি তারিখ নয়, এটি সাহস, ত্যাগ আর পরম অর্জনের এক অবিনাশী দিন।






















