ঢাকা ০২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মুক্তির ৫৫ বছর: নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় উদযাপিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস

রওনক আহমেদ রাহাদ
  • আপডেট সময় : ১২:৩২:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / 79

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয়েছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন—স্বাধীনতা। বিজয়ের এই গৌরবময় ক্ষণে বাংলাদেশ পদার্পণ করলো ৫৫ বছরে। সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়েছে।

নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান

পৌষের মিষ্টি রোদে উদ্ভাসিত প্রকৃতিতে আজ বিজয়ের আনন্দধারা। ৫৫ বছরে বিজয়ের পরম্পরায় সাম্য প্রতিষ্ঠার ইশতেহার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে নতুন প্রজন্ম। অগ্রজদের প্রত্যাশা—রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার আধিপত্যবাদ দূর করে সম্মিলিতভাবে একটি নতুন, মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদরাও থাকছেন এবারের বিজয় উদযাপনে। ২৪’র ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক মাতৃভূমি গড়ার প্রত্যাশা দেশের আপামর মানুষের।

প্রেক্ষাপট: বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও চূড়ান্ত বিজয়

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্যাংক-কামানের মতো ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের আহ্বানে দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। উন্নত সমরাস্ত্র ছাড়াই এই বীর সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে শত্রুর মোকাবিলা করেছিলেন।

দীর্ঘ ৯ মাস হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনেন। জাতি আজ এই বিজয়ের দিনে গভীর কৃতজ্ঞতা ও পরম শ্রদ্ধায় দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের স্মরণ করছে।

রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতাদের বার্তা

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে দিনটিকে ‘জাতীয় গৌরবের প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার এবং ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছর ধরে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির মাধ্যমে দেশকে বিভাজিত করে বাংলাদেশকে লুটেপুটে খেয়েছে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ। তিনি উল্লেখ করেন, ‘৭১-এর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এক নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায় শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হয় বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও দিবসটি উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছে।

স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত, কড়া নিরাপত্তা

সাভার থেকে সেলিম আহমেদ জানান, রাত পোহালেই বিজয় দিবস, আর সে উপলক্ষে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত করা হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। গণপূর্ত অধিদপ্তর সৌধ প্রাঙ্গণ ধুয়ে মুছে রং তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তুলেছে। বাহারি ফুলের গাছ, লাইটিং এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার খান আনু জানান, শহীদ বেদী ও গণকবরগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি কূটনৈতিক এবং মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন।

এদিকে মহান বিজয় দিবস ঘিরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরাও টহলরত অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়াও দেশজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মুক্তির ৫৫ বছর: নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় উদযাপিত হচ্ছে মহান বিজয় দিবস

আপডেট সময় : ১২:৩২:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয়েছিল বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন—স্বাধীনতা। বিজয়ের এই গৌরবময় ক্ষণে বাংলাদেশ পদার্পণ করলো ৫৫ বছরে। সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়েছে।

নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান

পৌষের মিষ্টি রোদে উদ্ভাসিত প্রকৃতিতে আজ বিজয়ের আনন্দধারা। ৫৫ বছরে বিজয়ের পরম্পরায় সাম্য প্রতিষ্ঠার ইশতেহার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে নতুন প্রজন্ম। অগ্রজদের প্রত্যাশা—রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার আধিপত্যবাদ দূর করে সম্মিলিতভাবে একটি নতুন, মানবিক ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদরাও থাকছেন এবারের বিজয় উদযাপনে। ২৪’র ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে এক নতুন গণতান্ত্রিক মাতৃভূমি গড়ার প্রত্যাশা দেশের আপামর মানুষের।

প্রেক্ষাপট: বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ও চূড়ান্ত বিজয়

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ট্যাংক-কামানের মতো ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র নিয়ে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের ওপর গণহত্যা শুরু করলে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের আহ্বানে দেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। উন্নত সমরাস্ত্র ছাড়াই এই বীর সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে শত্রুর মোকাবিলা করেছিলেন।

দীর্ঘ ৯ মাস হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ৩০ লাখ মানুষের প্রাণ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনেন। জাতি আজ এই বিজয়ের দিনে গভীর কৃতজ্ঞতা ও পরম শ্রদ্ধায় দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীর সন্তানদের স্মরণ করছে।

রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক নেতাদের বার্তা

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বাণীতে দিনটিকে ‘জাতীয় গৌরবের প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার এবং ঐক্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, গত ১৬ বছর ধরে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নীতির মাধ্যমে দেশকে বিভাজিত করে বাংলাদেশকে লুটেপুটে খেয়েছে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ। তিনি উল্লেখ করেন, ‘৭১-এর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এক নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায় শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ডাকে শুরু হওয়া মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হয় বলে উল্লেখ করেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও দিবসটি উপলক্ষে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েছে।

স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত, কড়া নিরাপত্তা

সাভার থেকে সেলিম আহমেদ জানান, রাত পোহালেই বিজয় দিবস, আর সে উপলক্ষে জাতির বীর সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত করা হয়েছে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। গণপূর্ত অধিদপ্তর সৌধ প্রাঙ্গণ ধুয়ে মুছে রং তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তুলেছে। বাহারি ফুলের গাছ, লাইটিং এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ সম্পূর্ণ করা হয়েছে।

গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার খান আনু জানান, শহীদ বেদী ও গণকবরগুলো সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধান, বিদেশি কূটনৈতিক এবং মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন।

এদিকে মহান বিজয় দিবস ঘিরে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ও তার আশপাশের এলাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত চার হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্যরাও টহলরত অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়াও দেশজুড়ে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।