ভোট দিতে যায় বউ, মার্কা চেনে না কেউ; চরাঞ্চলের আজব ভোটার
- আপডেট সময় : ১০:০০:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
- / 189
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে যখন ভোটের হাওয়া বইছে, তখন গাইবান্ধার ৫টি আসনের গ্রামীণ ও চরাঞ্চলের নারী ভোটারদের মধ্যে নেই কোনো ব্যক্তিগত উচ্ছ্বাস। জেলার ১১ লাখের বেশি নারী ভোটারের একটি বড় অংশই আজও নিজেদের স্বাধীন ইচ্ছায় ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত। অভিযোগ উঠেছে, স্বামী, শ্বশুর কিংবা পরিবারের পুরুষ কর্তার নির্দেশেই নির্ধারিত হয় তাদের পছন্দের ‘মার্কা’।
পরিবারের নির্দেশই যেখানে আইন:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গোবিন্দগঞ্জসহ ৭টি উপজেলার ১৬৫টি চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। এখানকার নারী ভোটারদের কাছে ভোট মানেই পুরুষদের দেওয়া আদেশের বাস্তবায়ন। ভোটার হওয়ার পর থেকে কোনোদিন নিজের পছন্দে ভোট দিতে পারেননি চর কাপাসিয়ার মমতাজ বা জাহানারারা। তাদের সাফ কথা, “মেয়ে মানুষ আমরা, অভিভাবক যা বলবেন তাই শুনতে হয়।”
ভোটের অধিকার ও সামাজিক সংস্কার:
মালিবাড়ি ইউনিয়নের গৃহবধূ ময়না জানান, বিয়ের আগে বাবার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও বিয়ের পর তা বদলে গেছে। তিনি মনে করেন, স্বামীর অবাধ্য হওয়া ‘পাপ’, তাই স্বামী যে মার্কায় ভোট দিতে বলেন, সেখানেই তিনি সিল মারেন। এমনকি অনেক গৃহবধূ অভিযোগ করেছেন, ভোটের টাকা স্বামীরা নিলেও ভোটের দিন নির্দিষ্ট প্রার্থীর বাক্সে সিল মারতে বাধ্য হন তারা।
পারিবারিক কোন্দল ও ভোট বর্জন:
কামারজানি গ্রামের কোহিনুর বেগমের অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। পছন্দের প্রার্থী নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তর্ক করায় গতবার তাকে ভোট কেন্দ্রেই যেতে দেওয়া হয়নি। এবারও তার স্বামী সাত্তারের একই হুঁশিয়ারি— “আমি যা বলব সেই মার্কায় ভোট দিতে হবে, না হলে সেন্টারে যাওয়া হবে না।”
পরিসংখ্যান বনাম বাস্তবতা:
গাইবান্ধার ৫টি আসনে মোট নারী ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭ হাজার ৯৪৬ জন। সুন্দরগঞ্জ ও গোবিন্দগঞ্জে নারী ভোটারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে কোনো স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। গোষ্ঠীগত রাজনীতির মারপ্যাঁচে পরে মেম্বার-চেয়ারম্যানদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয় এই জনপদগুলোতে।
সচেতন মহল মনে করছেন, নারীরা মাঠে-ঘাটে শ্রম দিলেও রাজনৈতিক সচেতনতা ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তাদের প্রকৃত ভোটাধিকার আজও কাগজের কলমেই সীমাবদ্ধ।





















