প্রায় চার বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা গোপনে একটি খসড়া পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস। এই পরিকল্পনার প্রধান শর্ত হলো—কিয়েভকে মস্কোর কাছে তাদের কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে এবং ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার কমাতে হবে।

যদিও এই পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত না থাকার কথা জানিয়েছে মস্কো। একই দিনে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে রাশিয়ার ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় ৩ শিশুসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গোপন পরিকল্পনার বিস্তারিত ও শর্তাবলি

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, এই অনানুষ্ঠানিক খসড়া পরিকল্পনাটি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ক্রেমলিনের উপদেষ্টা কিরিল দিমিত্রিয়েভ।

ভূখণ্ড ছাড়: অনানুষ্ঠানিক এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে কিয়েভকে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য প্রথম থেকেই ভূখণ্ড ছাড়ের কথা নাকচ করে আসছেন।

সামরিক সহায়তা হ্রাস: পরিকল্পনায় কিয়েভকে মার্কিন সামরিক সহায়তা কমানো এবং ইউক্রেন বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার কমানোর কথা বলা হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান: আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসন এই গোপন পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

মার্কিন কর্মকর্তার ইঙ্গিত, রাশিয়ার অস্বীকার

হোয়াইট হাউস আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানালেও, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শান্তির জন্য ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মার্কো রুবিওর বক্তব্য: তিনি লিখেছেন, “টেকসই শান্তির জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া—দুই পক্ষকে কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু ছাড় দিতে হবে। এ কারণেই যুদ্ধ থামাতে আমাদের সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা তৈরি করে যেতে হবে।”

ক্রেমলিনের অস্বীকার: ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন কোনো পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার কথা অস্বীকার করেছেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও বলেছেন, ওয়াশিংটনের কাছ থেকে মস্কো ইউক্রেন নিয়ে খসড়া কোনো পরিকল্পনা পায়নি।

হামলা ও কূটনৈতিক তৎপরতা

যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা ফাঁসের জল্পনার মধ্যেই গত বুধবার কিয়েভ সফরে গেছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিরা, যার মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সচিব ড্যানিয়েল ড্রিসকোল। ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, প্রতিনিধিরা জেলেনস্কিসহ বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করবেন।

রাশিয়ার হামলা: এদিকে, গত বুধবার রাতে পশ্চিম ইউক্রেনে রাশিয়া ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। তেরনোপিল শহরের বিভিন্ন বহুতল ভবন ও জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়।

ক্ষয়ক্ষতি: ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই হামলায় ৩ শিশুসহ অন্তত ২৫ জন নিহত এবং ৭৩ জন আহত হয়েছেন।